একটি বাড়ি একটি খামার
প্রকল্প সম্প্রসারণ অনুমোদন’
পল্লী সমবায় ব্যাংক’ গঠনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক:গ্রামীণ উন্নয়নে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে দেশের সব ইউনিয়নে এই প্রকল্পের কার্যক্রম ছড়ানো হচ্ছে। এসব কারণে এই প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ দুটোই বেড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় এক হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার ১৬৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো এসব সংশোধনী এনে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের টাকা-পয়সা লেনদেন ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পল্লী সমবায় ব্যাংক গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলো টাকা সঞ্চয় করে। ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে এখন ক্ষুদ্র সঞ্চয় হচ্ছে। তাই দরিদ্র পরিবারগুলো যাতে তাদের পুঁজিকে কাজে লাগাতে পারে এবং এসব টাকা যেন বেহাত না হয় সে জন্য পল্লী সমবায় ব্যাংক গঠন খুবই জরুরি। তাই এই প্রকল্পের আওতায় পল্লী সমবায় ব্যাংক গঠন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই ব্যাংক থেকে দরিদ্র নারী-পুরুষ চার থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে। একই সঙ্গে এই ব্যাংকের মাধ্যমে তারা টাকা লেনদেনের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে পারবে। এতে দুর্নীতি বন্ধ হবে। এই ব্যাংক গঠিত হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এটি আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) পছন্দের প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ব্যাপক উপকৃত হচ্ছে। প্রকল্পটি যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, গতকালের একনেক সভায় ‘বরেন্দ্র এলাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ’ শীষর্ক একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের বিরোধিতা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, এমনিতেই বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি কমে যাচ্ছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মরুকরণ প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে বলে জানান মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের সুর ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো বিচার-বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই নলকূপের মাধ্যমেই আর্সেনিকের উপদ্রব বেড়েছে। গভীর নলকূপের পরিবর্তে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও খাল-বিল পুনঃখননের ওপর বিশেষ জোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র জানায়, এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখা যাবে। প্রকল্পটি যেহেতু নিয়ে আসা হয়েছে, তাই অনুমোদন দেওয়া হলো।
সভায় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া তাঁর মন্ত্রণালয়ের ‘হাজারীবাগের চামড়াশিল্প সাভারের স্থানান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা কমিশনে পড়ে আছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন বলেন, কারখানার মালিকরা সাভারে যেতে না চাইলে কেন এই প্রকল্পটি অনুমোদন করতে হবে? পরিকল্পনাসচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি অপচয় হবে বলে জানান সচিব। তাই প্রকল্পটি অনুমোদন দরকার নেই বলেও জানান তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারখানা কারা স্থানান্তর করবে বা না করবে বিষয়টি আমরা দেখব। প্রয়োজনে তাদের হাজারীবাগ থেকে উচ্ছেদ করা হবে। আগামী একনেক সভায় প্রকল্পটি উত্থাপনের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চামড়াশিল্পে উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করতে চায়। কিন্তু কারখানা স্থানান্তর না করায় তারা এগিয়ে আসছে না। দ্রুত সাভারের প্রকল্প এলাকাকে শিল্পপল্লী হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একনেকে চার হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৯২৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট ৬০৪ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য থেকে মেটানো হবে। একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন, ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন, ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিদ্যমান স্টেডিয়াম সংস্কার ও উন্নয়ন, ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর নলকূপ থেকে পাইপের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস